সেন্টার ফর ইকনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হচ্ছে চীন।
শনিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘বেশকিছু বছর ধরেই চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং ক্ষমতার লড়াই চলে আসলেও যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারী ঠিকমত সামাল দিতে না পারায় অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’
সিইবিআর’র রিপোর্টে বলা হয় , ২০২৮ সালের মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধিতে চীন যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যাবে তাই নয় একইভাবে জাপানকে টপকে তিন নম্বরে উঠে আসতে পারে ভারত। সেক্ষেত্রে জাপান চলে যাবে চার নম্বরে। চারে থাকা জার্মানি চলে যাবে পাঁচে এবং পঞ্চম স্থানে থাকা ব্রিটেন ষষ্ঠ স্থানে থাকতে পারে। করোনা মহামারী অর্থনীতিতে এসব দেশগুলোর অবস্থান যেন নতুন করে নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
সমীক্ষা রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৫.৭ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে চীনের। ২০২৬ থেকে ৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমলেও, ওই ৪ বছরে অন্তত ৪.৫ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে দেশটির। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি প্রতি বছর ১.৯ শতাংশ করে হ্রাস পাবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ ওই সংস্থা প্রতিবেদনটিতে ব্যাখ্যা করে বলছে, চীন করোনা পরিস্থিতি দারুণভাবে মোকাবেলা করেছে। দেশটির উহানে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেয়নি। ফলে অর্থনৈতিক গতি শ্লথ হয়নি এবং করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঈর্ষণীয়ভাবে সক্ষম করে তুলতে পেরেছে চীন। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি করোনায়। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপড়েনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেকটাই বিপরীত।
করোনা মোকাবিলায় নজর দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছিলো চীন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে আমল দেননি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা গা ছাড়া ভাব দেখায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা বিস্তার অনেক বেড়ে যায়। যা মার্কিন অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং পরিস্থিতি না পাল্টালে আগামী এপ্রিল নাগাদ দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশেন।
অন্যদিকে, করোনা সঙ্কট কাটিয়ে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গতি ফিরে পাবে বলে মনে করা হলেও এই মুহূর্তে দেশটির যে পরিস্থিতি, তাতে ২০২৪ সালের পরও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি প্রতিবছর ১.৬ শতাংশ করে হ্রাস পেতে পারে। জাপানের সেন্টার ফর ইকনমিক রিসার্চ ডিসেম্বরের শুরুতে জানিয়েছিল, ২০২৮ অথবা ’২৯ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে চীন। এমনকি ২০২৩ সালের মধ্যে চীন উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে।