মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। সেই সাথে দেশটির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধের ব্যাপারে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে দেশটিতে চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। একই সঙ্গে তারা বিবদমান সব পক্ষের মধ্যে আলোচনাসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান জোটের বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত ১০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পাঁচ দফায় একমত হয়েছেন। দফাগুলো হচ্ছে, অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিবদমান সামরিক-বেসামরিক পক্ষের মধ্যে আলোচনা, আলোচনায় জোটের চেয়ারম্যানের বিশেষ দূতের মধ্যস্থতা, মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারে আসিয়ানের বিশেষ দূত ও প্রতিনিধিদলের সফর।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পর প্রথম বিদেশ সফরে গিয়ে এসব আহ্বান পেলেন জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। বৈঠকের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমারের নবগঠিত জাতীয় ঐক্য সরকার।
বৈঠকের শেষে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন বলেন, সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করেননি মিয়ানমার জেনারেল। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। বলেছেন, বিষয়গুলোতে সহযোগিতা করবে।
রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন বলেন, মিয়ানমারের শোচনীয় অবস্থার অবিলম্বে অবসান হওয়া উচিত।
হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান আসিয়ানের প্রধান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো। একইসঙ্গে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসারও তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আর চলতেও দেওয়া যায় না। সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে গণতন্ত্রপস্থীদের সাথে সরকারের আলোচনা শুরু করে, দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এদিকে, বৈঠক চলাকালে সম্মেলনস্থলের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় শান্তিকামী মানুষ। তারা ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন ও হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তবে এ সময় সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের নির্বাচিত রাজনৈতিক দলকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ৭০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে এখনো অব্যাহত আছে সামরিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। শনিবারও (২৪ এপ্রিল) সড়কে অবস্থান নিয়ে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা।