আপনারা সকলে ভাল আছেন?
মাদক ব্যবসা হতে প্রত্যাবর্তন করার পর আপনারা কেমন আছেন? এখন ভাল আছেন, না আগে ভাল ছিলেন? এমন সহজ সুন্দর প্রশ্ন দিয়ে আরএমপি’র পুলিশ লাইন্সে শুরু হয় মাদক ব্যবসা হতে প্রত্যাবর্তনকারীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত কর্মশালা।
আজকের এ অনন্য ব্যতিক্রমী কর্মশালার সম্মানিত প্রধান অতিথি আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম এভাবেই রজনী গন্ধ্যার স্টিক হাতে তুলে দিয়ে কুশল বিনিময় করছিলেন আলোর পথে ফেরা মানুষদের সাথে।
তিনি তাঁর চলমান বক্তব্যে আরও বলেন, এখন আপনারা অনেক ভালো মানুষের সাথে কথা বলছেন, পুলিশ কমিশনারের সম্মুখে কথা বলছেন। আমাদের মাঝে উপস্থিত যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, কর্মসংস্থান ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপক এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিডি উপস্থিত আছেন। আমি তাঁদের সাথে কথা বলেছি, কিভাবে আপনাদের পুনর্বাসন বা আর্থিক সহায়তা করা যায়। বড় বড় ব্যাংক কর্মকর্তাগণের সাথে কথা বলেছি, কিভাবে আপনাদের একটু সহায়তা করা যায়। আমি চিন্তা করছি কিভাবে আপনারা ভালো পথে থাকবেন।
কিন্তু এতকিছুর পরও যদি আপনারা কেউ পুনরায় আগের পথে যান তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনভাবেই মাদকের সাথে আর সম্পৃক্ত হওয়া যাবেনা। তবে যাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা আছে আইনি প্রক্রিয়ায় তারা বেরিয়ে আসুন তাদের আর পুলিশ হয়রানি করবেনা। এখন ভাবতে হবে আগামীতে কিভাবে ভাল থাকা যায়।
আপনারা যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল, যাদের সামর্থ্য আছে সে সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদেরই জীবিকার পথ বেছে নিতে হবে। যাদের একদম সামর্থ্য নাই তাদের কিভাবে সাহায্য করা যায় সে বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। আজকে এখানে উপস্থিত মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি। আপনারা ইতোমধ্যে বুঝেছেন বর্তমানে মাদক ব্যবসা রাজশাহীতে করাটা খুব কঠিন ব্যাপার। আপনাদের যারা এখন পূর্বের পেশায় ফিরে যেতে চক্রান্ত করবে, ভালো থাকতে নিরুৎসাহিত করবে তথ্য দিন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা নগদ অর্থ, সেলাই মেশিন, ভ্যান দিয়ে স্বনির্ভর করার চেষ্টা করছি তাদের, যাদের কারো পা নেই চলাফেরায় অক্ষম, এমন মহিলা আছে একদম অসহায় তাদের দেখাশোনার কেউ নেই। বাকিদের যাদের কর্মক্ষম যোগ্য সন্তান আছে তাদের নাম দেওয়ার জন্য বলছি। যারা যুব উন্নয়নে ট্রেনিং নিতে ইচ্ছুক, তাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ট্রেনিং শেষে তাদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদি পালন লোনের ব্যবস্থা করা হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে সামান্য সুদে লোন দিবে। তবে একটা কথা পরিস্কার মাথায় রাখতে হবে যে, লোন পরিশোধ করতে হবে, হতে হবে স্বনির্ভর। সমাজসেবা অধিদপ্তরও এগিয়ে আসবে এ কাজে।
প্রধান অতিথি সামনে
বসে থাকা একজন বয়োবৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
এ মুরুব্বী চলতে পারেন না, তার একটি পা নেই। তাঁর মতোদের আমরা অনুদান দিয়ে অথবা তাঁর ছেলের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিব। এখন আপনারা কে কোন কাজ করবভর,তা আমরা নোট করে নিচ্ছি।
আপনারা যাওয়ার আগে আপনাদের পুরনো মামলার উকিলের নাম দিবেন, তাদের অনুরোধ করব তারা যেন আপনাদের নিকট হতে ফিস না নিয়ে বা সামান্য ফি নিয়ে মোকদ্দমা পরিচালনা করেন। অর্থাৎ আপনারা যেন আর্থিক চাপে না থাকেন। আপনাদের পরিবারের ভাই বোনদের নাম নেওয়া হয়েছে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখানে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সমাজসেবার কর্মকর্তা আছেন, তাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যাবে। ট্রেনিং শেষে কর্ম সংস্থান হবে।
ধরাবাঁধা পুলিশি কাজের বাহিরেও একটু ভিন্ন পন্থায় কাজ করে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে মূল্যবোধের জাগ্রত উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে মাদকসহ সকল অপরাধ। একটি দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব অল্প সময়ের পরিসরে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে আরএমপি’তে।
পরিশেষে, সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে, সত্য ও সুন্দরের পক্ষে কাজ করা পুলিশ কমিশনার সকলকে মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ জানান ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
সূত্রঃ SSP, RMP