আরএমপি নিউজঃ বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক), সভানেত্রী জনাব জীশান মীর্জার মানবিক উদ্যোগে রাজশাহী'র শরবত বিক্রেতা অদম্য, পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থী সাদেকুল ফুডপান্ডার খাবার সরবরাহের জন্য পেল সাইকেল, হেলমেট ও মোবাইল ফোন। সে গোদাগাড়ী থানার পশ্চিম বামনাইল গ্রামের মোঃ জার্সিস আলীর ছেলে।
আজ ১০ অক্টোবর ২০২১ সকাল ১০.০০ টায় আরএমপি সদরদপ্তরে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি, আরএমপি কর্তৃক আয়োজিত সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) সভানেত্রী ও ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ এর সহধর্মিণী জনাব জীশান মীর্জা। আরএমপি'র সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রসঙ্গত 'শরবত বিক্রির ফাঁকে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি" শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি'র সভানেত্রী জনাব জীশান মীর্জার নজরে আসে। তাঁর আন্তরিক উদ্যোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সাদেকুলের বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করে। (দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদটি পড়তে লিংকে ক্লিক করুন https://cutt.ly/lE3fqig )
আরএমপি ডিবি'র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দৈনিক প্রথম আলো রাজশাহী'র নিজস্ব প্রতিবেদক জনাব আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের সাথে যোগাযোগ করে সাদেকুল ইসলামকে খুঁজে বের করেন। সাদেকুল সম্পর্কে জানা যায়, সে খুবই পরিশ্রমী ও মেধাবী। রাজশাহী শহরে থেকে সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। হাফেজিয়া শেষ করার পর টিউশনির পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে। নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায় বসবাস করার সময় নওগাঁর কয়েকজনকে ভ্যানগাড়িতে করে শরবতের ব্যবসা করতে দেখে তার এ পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তাঁদের কাছ থেকে শরবত বিক্রয়ের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। গরমের সময় রাজশাহীতে শরবতের বেশ চাহিদা থাকলেও শীতের সময় চাহিদা না থাকায় সে আগাম ফুডপান্ডায় যোগ দেয়।
তার বিষয়ে আরো জানা যায়, মোঃ সাদেকুল ১১ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। সে নগরের উপর ভদ্রা এলাকার মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল পাস করে। বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে না পেরে সে বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে। ২০২০ সালে তিনি আলিম পাস করে। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরিবারের আর্থিক সংগতি না থাকায় সে প্রায় পাঁচ বছর ধরে গরমের মৌসুমে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় ভ্রাম্যমান ভ্যান নিয়ে শরবত বিক্রি করে আসছে। এতে যে আয় হয়, তা দিয়েই মূলত তাঁর পড়াশোনার খরচ জোগাড় করার পাশাপাশি তার পিতা-মাতাকে সহায়তা করে আসছে।
বর্তমানে সে রাজশাহী সিটি কলেজে রাস্ট্রবিজ্ঞান (সম্মান) এ ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সাইকেল ও মোবাইল ফোন পেয়ে সাদেকুল ইসলাম অত্যন্ত খুশি। উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে সহায়তার হাত প্রসারিত করায় সাদেকুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সভানেত্রী জনাব জীশান মীর্জা ও আরএমপি'র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
পুনাক পুলিশ পরিবারের একটি সংগঠন হলেও বর্তমান সভানেত্রীর নেতৃত্বে নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে বৃত্তের বাইরে গিয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। লকডাউন পরিস্থিতে গরিব, অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, পায়ে পঁচন অবস্থায় অবচেতন ব্যক্তি খোকনকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা শেষে বয়স্ক পূনঃবাসন কেন্দ্রে পাঠানো, নদী ভাঙ্গনে সব হারানো মানুষদের কবরস্থান গড়ে দেয়া, সংগ্রামী নারী ফাতেমার কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও সেলাই মেশিন প্রদান করেন। এছাড়াও দরিদ্র রিক্সা/ভ্যান চালক, ফেরিওয়ালাদের মাঝে রেইনকোর্ট বিতরণ করেন। সবুজায়নের লক্ষে সারাদেশ ব্যাপি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা সহ সুস্থ্য জীবন চর্চার নিমিত্বে খেলাধুলা আয়োজন করেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিক সহায়তার এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুনাকের।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) জনাব মো: সুজায়েত ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) জনাব মোঃ রশীদুল হাসান পিপিএম, বিশেষ পুলিশ সুপার জনাব এ এফ এম আনজুমান কালাম, বিপিএম-বার সহ আরএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।