টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের লড়াই। দুই দলই জিতেছে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ। তবে ভারত একটা জায়গায় বাংলাদেশের চেয়ে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল। প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর দলটির শক্তিমত্তা নিয়ে এক ধরনের সমীহই তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের জন্য ম্যাচটা যে চ্যালেঞ্জিং হবে, এটা জানা ছিল সবারই।
কিন্তু আজ সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে উড়িয়ে দেওয়া সেই ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে কী দারুণ ফুটবলটাই না খেললেন বাংলাদেশের মেয়েরা! যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মোসাম্মাৎ সাগরিকার দেওয়া গোলে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে কোচ সাইফুল বারীর শিষ্যরা।
ম্যাচের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আফঈদা খন্দকারের বাড়ানো থ্রু ধরে ভারতের রক্ষণকে হতভম্ব করে দিয়ে জয়সূচক গোলটি করেন সাগরিকা। এর আগে ৮৭ মিনিটে মুনকি আক্তার নিশ্চিত একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ম্যাচে আগাগোড়াই ভালো খেলেও গোল করতে না পারার হতাশার মধ্যেই সাগরিকার ওই ঝলক। আগের ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন সাগরিকা।
খেলার শুরুতে ভারতই ঝাঁপিয়েছিল আক্রমণে। ১২তম মিনিটে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন নেহা। কিন্তু তিনি বাইরে মারেন। ভারতের হয়ে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলা অধিনায়ক নিতু লিন্ডার নেতৃত্বে ভারতের মধ্যমাঠ তৈরি করছিল একের পর এক আক্রমণ। তবে বাংলাদেশের রক্ষণভাগে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, জয়নাব বিবি রিতা, সুরমা জান্নাতরা ভারতীয় আক্রমণগুলো ভালোই সামলেছেন।
গোলবারে স্বপ্না রানি মণ্ডলও ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ভারতের আক্রমণের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মেয়েরাও শুরুতে গোল পেতে পারত। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই বক্সের একটু বাইরে থেকে নেওয়া আফঈদার ফ্রিকিকটি অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
বাংলাদেশের মেয়েদের গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লেগেছিল। এর পর বুটে-বুটে টক্কর ভালোই জমেছে। বাংলাদেশের সহ অধিনায়ক স্বপ্না রানি মাঝমাঠে দারুণ সমন্বয় করেছেন। মুনকিও ছিলেন অসাধারণ। স্বপ্না, মুনকিরা ভারতের রক্ষণ কাঁপালেও বলার মতো কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে বাংলাদেশের ফুটবলাররা ভারতের খেলোয়াড়দের পা থেকে বারবার বল কেড়ে সামনে বাড়িয়েছেন। কিন্তু সেগুলোকে গোলের সুযোগে পরিণত করতে পারেননি কেউই।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে। এই অর্ধে ভারত বলতে গেলে সুযোগই পায়নি। বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে তাদের বাংলাদেশের আক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে।
তবে এই অর্ধে চমৎকার গতিশীল ফুটবল খেলা বাংলাদেশের ব্যর্থতা ছিল গোলের সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে না পারা। ৭২ মিনিটে স্বপ্না রানি ভারতীয় গোলকিপার আনিকা দেবীকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত যোগ করা সময়ে সাগরিকার চমক। সুযোগের সদ্ব্যবহার। জয় নিয়ে, ফাইনাল নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল।
ভুটানের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। আফঈদা, স্বপ্নাদের চোখ এখন ৮ তারিখের ফাইনালে। সেদিন তারা কাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবেন, এখন আসল অপেক্ষাটা সেটা দেখার।