তীব্র তাপদাহ সয়ে রকমারি ফলের সমাহার নিয়ে কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রঙ ছড়িয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে গ্রীষ্ম দুহিতা জ্যৈষ্ঠের। গ্রামবাংলার এসব ফলে ছেয়ে গেছে শহরের অলিগলি ও বাজার। বছরের আর কোনো মাসে এত ফলের আগমন ঘটে না। তাইতো ভুল করে অনেকে জ্যৈষ্ঠ মাসকেই ‘মধুমাস’ বলে ফেলে।
জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রাজশাহীর বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমী ফলে। আম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, বেল, সফেদা, আনারস, বাঙ্গি, তালসহ বিভিন্ন ফলের ঘ্রাণে মুখর ফলের দোকান। ক্রেতাদের সমাগমে ব্যস্ত সময় কাটছে ফল বিক্রেতাদের। সোমবার (২০মে) নগরীর সাহেববাজার কাঁচাবাজারের আশেপাশের ফলের দোকানগুলোতে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।
এ মাসের শেষদিকে অধিকাংশ মৌসুমী রসালো ফল বাজারের আসার কথা থাকলেও ফলের মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। সপ্তাহখানেক পরে বাজারে আসবে পরিপক্ব আম ও লিচু। বাগান মালিক ও আড়তদাররা বাড়তি লাভের আশায় একটু আগেভাগেই বাজারে নিয়ে এসেছেন এইসব ফল। এরই মধ্যে রাজশাহীর বাজারগুলো ছেয়ে গেছে টক-মিষ্টি স্বাদের অপরিপক্ব লিচুতে। লিচু অপরিপক্ক হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌসুমের শুরুতেই ৬ থেকে ৭ প্রজাতির আম পাওয়া যাচ্ছে। এসব আমের মধ্যে হিমসাগর প্রতিকেজি ১৫০টাকা, গোপালভোগ প্রতিকেজি ২০০টাকা, গোবিন্দভোগ প্রতিকেজি ১৪০-১৬০টাকা, কাঁচামিঠা আম প্রতিকেজি ১০০-১২০টাকা, কাঠিমন প্রতিকেজি ১৮০টাকা, ফজলি আম কাঁচা প্রতিকেজি ৪০-৫০টাকা, সাতক্ষীরার গোপালভোগ প্রতিকেজি ২০০টাকা, বৈশাখী আম প্রতিকেজি ১৪০টাকা।
এদিকে বোম্বাই লিচু প্রতি একশ পিস ৪০০-৪৫০টাকা, দেশি লিচু প্রতি একশ পিস ৩০০-৩৫০টাকা, বারি-৪ লিচু প্রতি একশ পিস ৩২০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি পিস তাল ছোট (তিন কোষ) ১৫-২০ টাকা, বড় তাল (তিন কোষ) ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আনারসের জোড়া ৮০-১২০টাকা, প্রতি কেজি জামরুল ৭০-৮০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুম ফল ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, এইবছর ফলের দাম ভীষণ চড়া। তীব্র তাপপ্রবাহ অনাবৃষ্টির কারণে আম, লিচু ঝরে যাচ্ছে তাছাড়া ফলনো কম হয়েছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরিপক্ক হওয়ার আগেই লিচু বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগান মালিকেরা। ফলে লিচুর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা। তবে ভরপুর মৌসুমে ফলের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালেই থাকবে। তবে, জ্যৈষ্ঠের ২য় বা ৩য় সপ্তাহে মৌসুমী ফলের দাম কমে আসবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
লিচু ব্যবসায়ী আমিন বলেন, এবছর লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়াই পাইকারি বাজারে অতিরিক্ত দামে লিচু কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে আমাদের বিক্রি করা লাগছে। সাধারণ ২০০-৩০০টাকায় একশ পিস লিচু বিক্রি যৌক্তিক থাকলেও তা দাম বেড়ে ৪০০-৪৫০টাকা বিক্রি করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বিক্রেতাদেরও। বেসরকারি চাকুরীজীবী নয়ন আলী বলেন, তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মাঝেও রসনা তৃপ্তির জন্য জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই ফলের স্বাদ নিতে চাচ্ছি। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফেরার সময় বাহারি মৌসুমী ফল নিবো। তবে বিদেশি ফলের চেয়ে দেশি ফলের দাম অনেক বেশি বলছে।
কাটাখালির সুভান পেশায় ভ্যান চালক তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সবকিছুরই দাম বেশি। ফলের বাজার তো আগুন। একশ লিচু যদি ৩০০-৪০০টাকায় কিনতে হয় তাহলে আমাদের মতো মানুষরা কি করবে? কী খাবে? কিভাবে চলবে?
তবে, বাজারে এমন চড়া দামে ফল কিনতে একদিকে যেমন ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছে তেমনি নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব ফল বাজারে আসায় স্বাদ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। এদিকে এইসব অপরিপক্ক ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকগণ।
সূত্র: দৈনিক সোনালী সংবাদ।