Friday, 22 November 2024

   06:30:48 PM

logo
logo
কাল নওগাঁ-২ আসনের ভোট: নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্রের লড়াইয়ের সম্ভাবনা

9 months ago

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন হয়ে গেছে। কিন্তু প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে বাকি ছিল নওগাঁ-২ (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) আসনের নির্বাচন। সরকার গঠনে আর প্রভাব না রাখলেও সব প্রস্তুতি শেষে আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার হতে যাচ্ছে এ আসনের নির্বাচন।

প্রস্তুতির তথ্য নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ উৎসবমুখর ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে ও নিরাপত্তার দায়িত্বে উপজেলায় ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন ও সাধারণ কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ আনসার ৬৩৬ জন, পুলিশের মোবাইল টিম ১৩টি, স্ট্রাইকিং টিম ৩টি ও ৬টি চেকপোস্ট নিয়মিত কাজ করছে।

৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতোই এবার ভোটের দিন সকালে এই আসনের সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার।

নওগাঁর বরেন্দ্র জনপথ হিসেবে পরিচিত এ আসনের নির্বাচনে প্রার্থী আছেন চারজন। তাদের মধ্যে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠ থেকে সরে গিয়ে অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এর বাইরে আছেন শাসক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু। তার সঙ্গে ভোটের মাঠে ও ময়দানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের। আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র এই প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় পাল্টে গেছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাড়া-মহল্লায় এবং চায়ের টেবিলে প্রার্থীদের পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাহমুদ রেজা ৩০ জানুয়ারি দুপুরে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ছেন। ৩১ জানুয়ারি দুপুরে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন। তিনিসহ এ আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে বিজয়ের হাসি কে হাসবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

শহীদুজ্জামান সরকার ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-২০০১ সালে এ আসনে নির্বাচিত হন বিএনপির শামসুজ্জোহা খান জোহা। এরপর ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের হাটবাজার ও বিভিন্ন মোড়ের পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ঘোষণা করে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে, এ আসনে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এমনটাই দাবি করেন আওয়ামী লীগের একাধিক বঞ্চিত সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানরা ও সাধারণ ভোটাররা।

এ দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির মনোনীত (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থীর অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন।

লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘নওগাঁর অবহেলিত জনপদের (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে এ এলাকার সাধারণ ভোটাররা তাকেই ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করবেন বলে জানান।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম বলেন, অবহেলিত এ জনপদের মানুষ টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চায়। কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব তৈরির পাশাপাশি দুই উপজেলার শিক্ষিত ও বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে কৃষিবান্ধব শিল্প ও সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সাধারণ ভোটাররা তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলদার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনে গণতান্ত্রিক পন্থায় বিভিন্ন সেক্টরে কমিটি হয়েছে। কমিটিতে অনেক নতুন মুখ এসেছে আবার পুরাতন অনেকেই বাদ পড়েছেন। এতে করে অনেকের মনে কষ্ট থাকতে পারে কিন্তু ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দলছুট হয়েছে বা অন্য পক্ষ নিয়েছে এ বিষয়ে জানা নেই।’ দীর্ঘ ১৫ বছর দল ক্ষমতায়। এমপিও ক্ষমতায়। এতে করে এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাধারণ মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবেন।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলায় আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৩০১ জন, মহিলা ৭৮ হাজার ৭১৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ১ জন। নির্বাচনে ৫৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৩০৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬০৮ জন এবং ৫৩টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৯১ এবং অস্থায়ী ১৩টি।

সূত্র: দৈনিক বাংলা।