Monday, 23 December 2024

   05:07:26 PM

logo
logo
বর্তমান ও সাবেক পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিপিএসএ

6 months ago

আরএমপি নিউজ : বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে আংশিক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রকাশিত/প্রচারিত রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

আজ শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সংগঠনটির সভাপতি স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে সম্প্রতি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত অতিরঞ্জিত সংবাদ সম্পর্কে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ ধরনের আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত অতিরঞ্জিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ পুলিশ শত বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। সেই থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার সদস্যরা যেকোনো সঙ্কট ও প্রয়োজনে দেশ এবং জনগণের কল্যাণে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একসময় উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের নগ্ন থাবায় দেশবাসী চরম উৎকণ্ঠিত ছিলেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ছিল চরমপন্থি সন্ত্রাসের জনপদ। বাংলাদেশ পুলিশ এই জনপদকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রভাবে বাংলাদেশে গড়ে উঠা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ পুলিশ দেশবাসীর সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে। উগ্র সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ পুলিশ শুধু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়; যেকোনো মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে পিছপা হয়নি। করোনা অতিমারির সময় পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে, জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে মানবিক পুলিশ হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষের বাসায় ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দিয়েছে। মানবতার চরম বিপর্যয়ের সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন মরদেহ ফেলে প্রিয়জনরা চলে গেছে, তখন দাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। করোনার সময় জনগণের সেবায় ১০৯ জন পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তবুও পুলিশ সদস্যরা জনগণকে সেবা দেওয়া থেকে পিছপা হননি, তারা নিজের দায়িত্ববোধে ছিলেন অবিচল। করোনার সময় বাংলাদেশ পুলিশ সেবার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা অত্যন্ত বিরল। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী চক্র কর্তৃক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যেমন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও পেট্রোল বোমাবাজদের প্রতিহত করার ক্ষেত্রে পুলিশের সফলতার কারণে উক্ত গোষ্ঠি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় প্রতিনিয়তই পুলিশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত। স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী চক্র তাদের দোসর বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসী কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত। তাদেরই অনুকরণে ইদানিং কোনো কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মানহানিকর ও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার হীন উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের রিপোর্টের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই। তথ্যসূত্রবিহীন বাস্তবতা বিবর্জিত অতিকথিত এ ধরনের রিপোর্টে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার সদস্যদের মনোবল ক্ষুণ্ণের পাশাপাশি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীদের অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার ভূমিকাকে জনসমক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করে পুলিশকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য কতিপয় মিডিয়া অত্যন্ত সচেতনভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এক ধরনের কুৎসিত প্রচার যজ্ঞে শামিল হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এছাড়াও কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করছেন যা সাংবাদিকতার নীতিমালা বিরোধী।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন বিশ্বাস করে, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যম কর্তৃক গঠনমূলক সমালোচনাকে সংগঠনটি বরাবরই স্বাগত জানায়। কিন্তু গণমাধ্যমে কোনো খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করতে চায় সংগঠনটি। গণমাধ্যমে কোনো ঘটনার সামগ্রিক চিত্র উঠে আসুক, সত্য উন্মোচিত হোক। গণমাধ্যমের রিপোর্ট হোক সত্যাশ্রয়ী ও বস্তুনিষ্ঠ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশে পাঠকের কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি। অথচ কোনো এক রহস্যময় কারণে এক শ্রেণির মিডিয়া অতি সুকৌশলে বাংলাদেশ পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে। যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর। গণমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণারই শামিল। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা বাংলাদেশ পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয় যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। এ ধরনের অপপ্রচার সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা এবং দেশবিরোধী চক্রান্তের অপকৌশল কিনা তা বিবেচনার দাবি রাখে। ফলে, পুলিশি সেবা প্রত্যাশী মানুষ তথা দেশ ও জাতি সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাংলাদেশ পুলিশ কখনোই গণমাধ্যমের কাছে এ ধরনের অপেশাদারী সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করে না। 

বিজ্ঞপ্তিতে জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সর্তকতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়।