ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতি নিজের রূপে সাজে ফাগুনে। বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাসে কোকিলের মিষ্টি কলতানে উন্মাতাল হবে প্রকৃতি। ফুলেল বসন্ত যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসমুখরতায় মন-প্রাণ ভরিয়ে তোলে। কী নেই বসন্তের! আছে রং, রূপ, রস, লাবণ্য। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ।
ঋতুরাজ বসন্তের বন্দনা করতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ আর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসন্ত উপলব্ধি করেছেন এভাবে—‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত।’ হ্যাঁ, গাছের শাখার শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়ে, ঝরিয়ে দিয়ে মলিন পাতার রাশি, আজ শুক্রবার আবার এলো পহেলা ফাল্গুন, আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন।
ঋতুরাজের আগমনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে। ফুলে ফুলে আছে মৌমাছির গুঞ্জন। নতুন প্রাণের পত্রপল্লবে জেগে উঠেছে বৃক্ষ-লতা-গুল্ম। নদীর কিনার থেকে আদিগিন্ত প্রান্তর, কুঞ্জবন, অরণ্য-পর্বতে ডেকেছে নবযৌবনের বান। প্রকৃতির এই রূপতরঙ্গ দেখেই কবিগুরু লিখেছিলেন- ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালাবাসা যেন একে অপরের পরিপূরক।
পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পায় প্রবীণেরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’। এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে।
১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বসন্ত উৎসব’। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে এ উৎসব মহানগর ঢাকা থেকে সারাদেশে নতুন করে তরঙ্গিত হতে শুরু করেছে।