♦ আমার বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না, বাদ দিয়েছি ♦ কোটার সমাধান আদালতে, অশান্তি হলে আইন নিজের গতিতে ♦ মুক্তিযোদ্ধার নাতিরা পাবে না, রাজাকারের বাচ্চা-নাতিপুতিরা পাবে? ♦ ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা চাকরি করছেন তাদেরও ধরা হবে ♦ ট্রাম্পের ওপর গুলি দুঃখজনক
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন হাত দিয়েছি, আমি ছাড়ব না। আপন-পর জানি না, দুর্নীতি যেখানে হোক, যেই হোক, আমি তাকে ধরবো। জিরো টলারেন্স যখন বলেছি, তখন এটা করেই ছাড়ব। সম্প্রতি চীন সফর সম্পর্কে জানাতে গতকাল বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন। সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না! কী বলব, এটাই বাস্তব।
আমি জানতে পেরে তার কার্ড সিজ করেছি, তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। যা করার আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। দুর্নীতিবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে। অনেকে আমাকে বলেন, এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে; তাদের ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না। সেখানে কে আপন, কে পর-সেটা বিবেচনায় না এনে যে এ ধরনের অপরাধে জড়িত, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোটা আন্দোলন, সরকারবিরোধী গুজব, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মূলমঞ্চে ছিলেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ডাক টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এত ক্ষোভ কেন : চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরাও পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে। আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবনবাজি রেখে, সংসার ফেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। তারা বিজয় এনেছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন।
কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন, শুধু আন্দোলন না, যেসব ঘটনা ঘটাচ্ছিল, আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে ঘরের ভিতর বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিল। এসব দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে। বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুজন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চারজন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তীতে থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপর যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনো দিন ভাবিনি। এমনকি কোথাও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম নারী সচিব আমি করি। ডিসি, এসপি, ওসিসহ সব জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করব, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলত, কোথাও না কোথাও চাকরি করত। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত নয়। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না। সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পর হিসাবটা কী দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো জেলা, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি বা প্রশাসন বা কোথাও না।
কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পর কোর্ট যখন কোনো রায় দেয় সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কী তারা চিনবেন না। একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে, একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নেই। কোনো জ্ঞানই নেই। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনা কী ধরনের কাজ হয় সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না। তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেল, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না করে তারা রাজপথে সমাধান করবে। আমাকে বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না। কিছুই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটাবিরোধীরা রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায় তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল।
সমালোচনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, পরোয়া করি না : চীন সফর নিয়ে সমালোচনায় কিছু যায় আসে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দিই না। আমি এটায় (সমালোচনা) অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যারা এ কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন, তারা কি জেনেবুঝে বলছেন, নাকি শুধু আমাকে হেয় করার জন্য বলছেন, সেটাই প্রশ্ন। সব সময় আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো, এভাবে কথা বলা। বলতে বলতে এত বেশি বলে, যারা বলছে বলতে দেন। এখানে আমার কিছু যায় আসে না। চীন সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও সমালোচকরা বলছেন, এ সফরে কোনো প্রাপ্তি নেই- এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১টি সমঝোতা স্মারক সই ও আরও ৭টি এমওইউ হয়েছে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তার আগে ভারত গেলাম, সেখানে বলা হয়েছিল ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে এসেছি। চীনে গেলাম, বলে কিছুই দেয়নি। এগুলো বলেই আসছে। ভারতের কাছে দেশ বেচা, চুক্তি বাতিল করতে হবে। এটা এক ধরনের লোকের মানসিক অসুস্থতা বলে মনে করি। মানসিক অসুস্থতা ছাড়া বানোয়াট কথা কেউ এভাবে বলতে পারে না। তাদের (সমালোচক) জন্য করুণাই হয় আমার। তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই।
চীনের সঙ্গে চুক্তির পূর্ণ তালিকা সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। ২১টি নামও আছে। আপনারা চাইলে পড়তে পারি। না অনেক সময় অনেকে বলেন, কিছুই হয়নি। কিছুই না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসছি। ওরা তে বলবেই। তারা আবার মনে কষ্ট পেতে পারে। চীন সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাল ৫টার মধ্যে আমাদের সব কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। ওইদিন রাতে রওনা হয়ে ১১ (জুলাই) তারিখ ভোর রাতে আমরা ঢাকা ফিরে আসি।
হাওয়া ভবনের তালিকা দিয়ে বিসিএসে চাকরি হতো : অপর এক প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কোনো পরীক্ষা নয়, হাওয়া ভবন থেকে পাঠানো তালিকায় বিসিএসে চাকরি হতো বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালে। বিএনপির আমলে সেই সময়ে যত পরীক্ষা হতো, চাকরি হতো, সব হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি হতো। ঢাকা কলেজে সেই সময় একটা বিশেষ কামরা রাখা হতো। সেখানে বসে তাদের লোক পরীক্ষা দিত। তাদেরই চাকরি হতো। কোনো উচ্চবাচ্য সেসব কিন্তু নেই।
তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস করে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়াটা সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু হয়েছিল। খালেদার আমলে সেটা চলেছে। আমরা এটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।
নিচের দিক থেকে দুর্নীতি বেশি হয় : পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী অঢেল সম্পদের মালিক। গাড়িচালক কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাসার পিয়ন ছিল। সে-ও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। ড্রাইভার কীভাবে এত কোটি কোটি টাকার মালিক হলো, সেটা কীভাবে বলব। তাদের অপকর্ম আমরা ধরছি বলেই তো এখন জানতে পারছেন। এতদিন তো আপনারা জানতে পারেননি। তিনি বলেন, দুর্নীতি নিচের দিক থেকেই বেশি হচ্ছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। উৎসমুখ, কোন জায়গায় কোন?উৎসমুখ, কয়টা খুঁজবেন।
দুর্নীতি কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। সারা বিশ্বেই যে দেশটা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয় সেখানে কিছু অনিয়ম কিছু লোকের হাতে চলে যায়। যারা অপাঙক্তেয় তাদের হাতে কিছু টাকা পয়সা চলে যায়। তারা বানায়। তারা তো অপেক্ষা করে থাকে।
তথ্য জোগাড় আর ফাইল চুরি এক নয় : সচিবালয়ের ফাইল চুরির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য জোগাড় করা এক জিনিস। আর ফাইল চুরি আরেক জিনিস। আমি ভ্যাকসিন কিনব, আমার সেখানে নেগোসিয়েশন হচ্ছে, জরুরি পেপার। অফিসাররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। ফাইলটা রেখে কেবল একটু বাইরে গেল, অমনি আপনাদের স্বনামধন্য পত্রিকার এক সাংবাদিক ঢুকে সেই কাগজ চুরি করতে গেল। অফিসার এসে ধরল, সে সেটা নিয়ে বাথরুমে। সেখান থেকে ধরা হলো, সেটা ঢোকালেন তার শাড়ির ভিতরে। সেখান থেকে টেনে বের করা হলো। আর তা বিরাট অপরাধ হয়ে গেল। সে যে ফাইল চুরি করতে গেল এটা কোনো অপরাধ নয়। ফাইল চুরির জন্য পুরস্কারও পেল। কোনো বড় দেশ তাকে পুরস্কার দিয়ে দিল। এটা কি দুর্নীতি, ডাকাতি, চুরি, কোনটা? কী ডেফিনেশন দেবেন বলেন আমাকে। এ ঘটনা তো ঘটে। এর আগে নৌপরিবহনে ঢুকেও এটা করেছে। পরে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর আরেক জায়গায়। হিরোইন হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে গেল। যাব কোথায় বলেন! অথচ মিথ্যা ভুয়া রেকর্ড করে ছেড়ে দিচ্ছে। এর আগে একজন মিথ্যা পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ আনল। পরে সেও পুরস্কার পেয়ে গেল। এই যে কী কারণে হিরো হয়ে যায়! আর আমরা তো জিরো আছি।
প্রশ্নফাঁসে সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা : বিসিএসের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যারা উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি করছেন, খুঁজে বের করা গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেব না কেন। তাদের তো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে না। এখন সেটা খুঁজে দেবে কে। ওরা যদি বলতে পারে যে অমুকের কাছে বিক্রি করেছে তখন প্রমাণ করতে পারলে সেটি দেখা যাবে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হলেও ওই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে যারা অফিসার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও সেটি বিশ্বাস করি, বেনিফিশিয়ারি যারা, তাদেরও ধরা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ করবে না। কারণ, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে, উভয়ে অপরাধী। এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র যারা ফাঁস করে, আর সেই প্রশ্নপত্র যারা ক্রয় করে দুজনেই অপরাধী। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এদের খুঁজে বেরটা করবে কে। সাংবাদিকরা যদি চেষ্টা করে বের করে দেয়, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমি একটা কথা বলি, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ বা ২০০৩ সালে। বিএনপি আমলে যত পরীক্ষা হতো আর যত চাকরি হতো এটা কোনো পরীক্ষা-টরীক্ষা না। ওই হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো আর সেই তালিকায়ই হতো। তখন কোনো উচ্চবাচ্য নেই। এই যে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এই অনিয়মগুলো তো তখন থেকেই শুরু। আমরা সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে এই জিনিসটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন হওয়ার পর এই গ্রুপটা কী করে যেন আবার এখানে জায়গা করে ফেলে, যেটা এখন ধরা পড়েছে। আমরা কিন্তু একটা জিনিস, অনেক সময় এসব ধরতে গেলে অনেকে বলে এটা প্রচার হলে ভালো হবে না, ইমেজ নষ্ট হবে, অমুক হবে। আমি তাতে বিশ্বাস করি না। কীসের ইমেজ নষ্ট হবে। অন্যায়-অবিচার যেটা করবে, তাকে আমি ধরবই। তাতে আমার ওপর যতো কিছু আসুক পরোয়া করব না। তাদের ধরতেই হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। না হয় এটা চলতেই থাকবে। আগামীতে যাতে এটা না চলতে পারে, তার জন্য ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ চীন থেকে আগে ফেরা : চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমার সব কর্মসূচি বিকাল ৫টায় শেষ হয়ে যায়। আমাদের ১১ (জুলাই) তারিখে পৌঁছানোর কথা। ১১ তারিখেই এসেছি। হয়তো বিকালে আসার কথা। সেখানে আর্লি মর্নিং-এ আসছি। অনুকূল বাতাস থাকায় বিমান আগেই চলে এসেছে বলেও তিনি জানান।
চীন সফর এগিয়ে এনে আগে দেশে ফিরে আসা, ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হওয়ার কথা সেখানে ১০০ মিলিয়ন ইউয়ানের (চীনা মুদ্রা) চুক্তি হয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রচারণা বেশি হচ্ছে; এরকমও খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘আপসেট পিএম হাসিনা রিটার্ন ফ্রম চায়না’- এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যমের কথা শুনে যারা বললেন, তারা তো দুই দিন আগেও বলেছেন ভারতের কাছে সব বিক্রি করে দিয়ে এসেছি এবং দেশ বিক্রির অসম চুক্তি করে আসছি। তাহলে কোনটা ঠিক?
কিছুটা আগে দেশে আসার কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মেয়েকে ওরা (চীন) দাওয়াত দিয়েছিল। ওদের হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে দাওয়াত পেয়েছিল। ওর যাওয়ার কথা। ওর প্রচ- জ্বর থাকায় আমার সঙ্গে যেতে পারেনি। এটা বাস্তবতা। আমি একটা মা। ওই অবস্থায় ওকে রেখে আমাকে চলে যেতে হয়। তিনি বলেন, আমার সব কর্মসূচি কিন্তু শেষ হয়ে যায়। আমাদের কিন্তু ১১ (জুলাই) তারিখে পৌঁছানোর কথা। আমরা ১১ তারিখেই এসেছি। হয়তো ১১ তারিখ বিকালে আসতাম। সেখানে আর্লি মর্নিং-এ আসছি। মাত্র ৫ বা ৬ ঘণ্টার পার্থক্য। এই ৬ ঘণ্টার মধ্যেই এত বড় তোলপাড় হয়ে যাবে, এটা তো বুঝতে পারিনি। আর এটা তো নতুন কিছু নয়। এর আগে যখন ভারতে গেলাম, আমার তো ৩/৪ দিনের প্রোগ্রাম ছিল। যখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বললেন উনি বাংলাদেশে আসবেন, তো আমার একটা দায়িত্বই ছিল উনি বাংলাদেশে যখন আসবেন তার আগে আমার ঢাকা এসে পৌঁছানোর কথা। পৌঁছে উনাকে রিসিভ করব। এজন্য আমি ভারতে দুই দিনের প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে চলে আসলাম। এসে ওনাকে রিসিভ করলাম। আগে ফেরা এটাকে রং-চং মাখিয়ে এতকিছু বলা! যারা এসব কথা বলেন তাদের দেশবাসী যেন একটু চিনে রাখেন, যে তারা এ ধরনের বানোয়াট কথা বলে।
এত উন্নয়নও তাদের চোখে পড়ে না : অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পত্রিকায় কী লিখেছে সেটা আমার মাথাব্যথা নয়। কিন্তু যারা ভারতবিরোধী বক্তৃতা দিয়ে আবার ভারতের লেখা পড়ে কমেন্টস করে, তাদের নীতিটা কী সেটা বোঝা উচিত। তাদের মন-মানসিকতা কী এটা জানতে চাই। আমার সবকিছুই তো খারাপ। দেশটা ভালো চলতেছে না। দেশ সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন মেট্রোরেলে বসে বলে এটা কী বানাল? এক্সপ্রেসওয়ে খুব দ্রুত চলে আসে। ওটাও সর্বনাশের ব্যাপার! গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেছে। এটাও তো দেশের সর্বনাশ! আজ গ্রামগুলো শহর হয়ে যাচ্ছে, নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে তারা, তাদের দৃষ্টিতে সেটাও সর্বনাশ।
ট্রাম্পের ওপর হামলা দুঃখজনক : শনিবার এক নির্বাচনি সমাবেশে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যাচেষ্টা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অবশ্যই এ ধরনের হামলার নিন্দা জানাই। আমেরিকা সব সময়ই তাদের গণতন্ত্র নিয়ে গর্ববোধ করে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক।
প্রসঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের একটি দাবিনামা আমার কাছে এসেছে। সেখানেও তাদের ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেগুলো আমার মার্ক করা আছে। এর মধ্যে তুলতে চাই না। আমার কাছে লেখা আছে। তাদের (শিক্ষক) ভুল ধারণা সেখানে ফান্ড (পেনশন ফান্ড) আছে। এখানে ফান্ড বলে কিছুই নেই। তিনি বলেন, পেনশনটা দেওয়া হচ্ছে যারা আমাদের ট্যাক্স দেয়, তাদের টাকা থেকেই দেওয়া হয়। আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম করতে যাচ্ছি সবার জন্য। তাদের অনেকগুলো ভুল ধারণা। এত বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। পেনশন নিয়ে তাদের ধারণা এত বিভ্রান্তিকর! এর মধ্যে দুই একটা জিনিস আছে, সেটা ২৪ না ২৫, ওইটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাপার না। আর কয়েকটি বিষয় আমি দেখে রেখেছি। মার্ক করে রেখেছি। সেগুলো আমরা দেব। তবে আন্দোলন তারা চালাতেই থাক, চালাতে চালাতে যখন টায়ার্ড হবে তখন বলব, তার আগে বলব না। বলার দরকারটা কী? শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের আজ কারও চাকরি না থাকলে কাল কিছুই করার নেই। কোথায় যাবে তারা, তার পরিবার কোথায় যাবে। সেজন্যই পেনশন স্কিম এমনভাবে করা হয়েছে, বিপদের সময় যাতে হেল্প হয়। আপনারা সবাই এর (পেনশন স্কিম) সঙ্গে যুক্ত হন। আপনাদের পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।