রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। পূর্বাচল নতুন শহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য রপ্তানিকে বহুমুখী করার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো। গার্মেন্টেস খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা। তিনি বলেন, আমরা এখন পাট এবং চামড়া শিল্পের ওপরে বিশেষ নজর দিচ্ছি। এই দুই খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এ বছর মেলা প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে সামনে আনার জন্য মেলার প্রবেশদ্বার করা হয়েছে কর্ণফুলী ট্যানেলের আদলে। এক পাশে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অপর পাশে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের প্রতিচ্ছবি রাখা হয়েছে। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বা ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব নিয়োজিত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়মিত টহল দেবে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি মেলা শুরু হলেও এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে আজ ২১ জানুয়ারি মেলা শুরু হচ্ছে। মেলার আয়োজক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, এবার মেলায়, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৬ থেকে ১৮টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন। মেলায় ই-কমার্স সেবাকে আরও বেগবান করা হবে। যাতে সারা দেশের মানুষ এই সুবিধা পেতে পারে। মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সঙ্গে সংযুক্ত করতে ফার্মগেট থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে উত্তরা থেকে যারা মেলায় আসবে তারা মেট্রোরেল এসে ফার্মগেট থেকে বাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা মেলায় চলে আসতে পারেন।
গতকাল সরেজমিনে মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতুর উত্তর পাশেই বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। আমাদের রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শিল্পী-শ্রমিকদের স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কর্মযজ্ঞের এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পচ্ছিন্নতাকর্মীরা প্রদর্শন কেন্দ্র ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করছে। কোন কোন স্টলে পণ্যের পসরা সাজানো হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশ মূল্যও বেড়েছে। এ বছর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা ও ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ২০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিনে মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। অলিম্পিক প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সেলিম বলেন, ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে অলিম্পিক বিস্কুট কোম্পানির প্যাভিলিয়নটি। তারা আশা করছেন, এবারের মেলায় ভালো বিক্রি হবে। হাজী বিরিয়ানি এন্ড কাবাব হাউজের মালিক রাজু আহম্মেদ বলেন, কুড়িল-কাঞ্চন-মেলা প্রাঙ্গণ সড়কের দুরবস্থার কারণে গত বছর ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এ বছর এ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন হবে বেশি বলে তিনি মনে করছেন। দিল্লি মেটালের বিক্রয় প্রতিনিধি নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সকল পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার বিক্রি ভালো হবে। সেইভাবে আমাদের প্রস্তুতিও আছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেছেন, এ বছর মেলায় দর্শনার্থী ও লেনদেন দুইই বাড়বে বলে আশা করছি।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক