জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়ালেও প্রাণঘাতী নয়, তবে যারা কখনো টিকা নেননি তাদের জন্য বিপজ্জনক
দেশে শীতের সঙ্গে বাড়ছে করোনা। নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন-১-এর কারণে দ্রুত বাড়ছে রোগী। সরকারি হিসাবে গতকাল ৩৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র আরো বেশি। করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে ভারতসহ ৪১ দেশে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, জেএন-১ উপধরনটি নিয়ে উদ্বেগ আছে; কারণ, এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। তবে এর তীব্র উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো বলেছিল, যেসব অঞ্চলে বা দেশে শীতকাল আসন্ন কিংবা শীতকাল চলছে, সেসব দেশে শীতকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ জেএন-১-এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, জেএন-১ দ্রুত সংক্রমিত করলে প্রাণঘাতী নয়। তবে যারা এক ডোজও করোনার টিকা নেননি, তাদের জন্য বিপজ্জনক। এছাড়া ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত এবং বয়স্ক, তাদেরও ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, নিভৃতবাস, লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো ইত্যাদির মাধ্যমে কোভিড-সংক্রমণ অনেকটাই আটকে দেওয়া সম্ভব। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
গত বৃহস্পতিবার দেশে জেএন-১ উপধরনের আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা জানিয়েছে আইইডিসিআর। করোনায় আক্রান্ত ছয় জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ জনের জেএন-১ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগর ও ঢাকার পাশের একটি মহানগরের রোগীর নমুনা পরীক্ষায় এই উপধরন ধরা পড়েছে। এর আগে ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় জেএন-১ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি দেশে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করার জন্য আইইডিসিআরকে পরামর্শ দেয়। এছাড়া হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার এবং বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সরকারকে পরামর্শ দেয় কমিটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সরকার করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সর্দি, কাশি, জ্বরসহ করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করতে হবে। সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়ার কারণে কেউই যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভোগে। কারণ যে-কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না।
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, যেহেতু করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাই এখন প্রথম কাজ হবে, যারা টিকা নেননি, তাদের খুঁজে বের করা।
এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য-সহকারীর মাধ্যমে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। এর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে সবারই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ যারা এখনো টিকা নেননি, তাদের জন্য করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তাদের জন্য ঝুঁকি আরো বেশি। সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে সাড়ে ৭ লাখ করোনার টিকা মজুত রয়েছে। সম্মুখসারির মানুষসহ বয়স্ক, বৃদ্ধ এবং যারা একবারও টিকা নেননি, তাদের এই টিকা দেওয়া হবে। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে গ্যাভি থেকে আড়াই কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য প্রোটোকল সবারই মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ফ্রিতে মাস্ক দেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে পেতে পারে।
প্রায় চার বছর আগে ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। যারা তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে চান, তাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সদন এবং যারা চতুর্থ ডোজ টিকা নিতে চান, তাদের তৃতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সনদ টিকাকেন্দ্রে দেখাতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটিকে অনুসরণ করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক।