জমিতে কী পরিমাণ সার লাগবে, তার সঠিক তথ্য দেবে নিউট্রিয়েন্ট ব্যালান্স নামের মোবাইল অ্যাপ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক এটি উদ্ভাবন করেছেন। অ্যাপটির মাধ্যমে আলু, বোরো ধান, রোপা আউশ ধান, রোপা আমন ও ভুট্টা—এই পাঁচটি ফসলের ক্ষেত্রে সারের পরিমাণ জানতে পারবেন কৃষক। গবেষকরা বলছেন, স্মার্ট কৃষক তৈরিতে এই অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
‘ডেভেলপমেন্ট অব আ ফিল্ড লেভেল স্কেল নিউট্রিয়েন্ট ব্যালান্স ক্যালকুলেটর ফর ক্রপস অব অ্যান ইনটেনসিভলি ম্যানেজড অ্যাগ্রিকালচারাল সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবির মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর। সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন একই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দীন।
বাকৃবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা তিন বছরের ওই গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি (বিএএস) ও ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। অ্যাপটি আরো উন্নত করে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রকল্পটি এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে ‘আর্কাইভস অব অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড সয়েল সায়েন্স’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে এই অ্যাপ নিয়ে গবেষণাবিষয়ক দুটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া জার্নাল অব ইন্টিগ্রেটিভ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে একটি প্রকাশনা গৃহীত হয়েছে।
উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপটির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের অ্যাপটি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই ব্যবহার করা যাবে। কৃষকের দেওয়া সব তথ্য বিশ্লেষণ করে যতটুকু সার দেওয়া হয়েছে, তার একটি ব্যালান্স মান দেবে অ্যাপ।
ব্যালান্সের মান ঋণাত্মক এলে বুঝতে হবে যে ওই পরিমাণ অতিরিক্ত সার জমিতে দিতে হবে। ধনাত্মক হলে বুঝতে হবে ওই পরিমাণ সার অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ওই পরিমাণ সার কম প্রয়োগ করতে হবে। এতে খরচ যেমন কমবে, পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়বে।’
সহকারী গবেষক অধ্যাপক মো. জহির উদ্দীন বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশের তিনটি স্থানে (বগুড়ার শেরপুর, কুমিল্লার চান্দিনা এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা) এই অ্যাপ দিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করা হয়েছে।
তিনটি স্থানেই অ্যাপ থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। অ্যাপটির এখনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এটি সম্পূর্ণ কৃষিবান্ধব করে এর ব্যবহারে কৃষক পর্যায়ে প্রচার চালানো হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের সব জেলার কৃষকদের কাছে এই অ্যাপ পৌঁছে দেওয়া। অ্যাপটি স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের কৃষক ও খামারিদের অ্যাপটি খুব সহায়ক হবে। একটি এলাকার মাটি, জলবায়ু, বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন তথ্য যখন অ্যাপটিতে যুক্ত করা হবে, অ্যাপটি জানিয়ে দেবে ওই জমিতে কোন ফসলের জন্য কতটুকু সার লাগবে। এ ছাড়া কতটুকু সার গাছ নিজে ব্যবহার করবে, পানিতে অপচয় হবে, বায়ুদূষণে অপচয় হবে, সেই তথ্যও জানিয়ে দেবে।