আরএমপি নিউজ: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারি নজরদারির পাশাপাশি দেশের জনগণকে বাজারের প্রতি তাদের নজরদারি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর অধিবেশন চলাকালীন একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি দেশের জনগণকে তাদের নজরদারি (সরকারি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি) রাখার আহ্বান জানাচ্ছি এবং এটি কাজকে সহজ করবে।’ কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীদের অসাধু কর্মকা- বন্ধে বাজার মনিটরিং ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এ প্রশ্ন উপস্থাপন করেন।
সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরাও আছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই যদি বাজার মনিটরিংয়ে সরকারকে সাহায্য করে, তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে দাম বাড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং এটি চালিয়ে যাব আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’ সংসদ নেতা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বাজারে অসাধু কার্যক্রম বন্ধে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এর পরেও যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য পায় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে ক্রেতারা যাতে সহনীয় পর্যায়ে পণ্য ক্রয় করতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এটি সম্পর্কে অনেক সচেতন।’
শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া কোভিড-১৯ মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরাইলের হামলার কারণে বিশ্বব্যাপী পরিবহন সমস্যাও রয়েছে। আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী পরিস্থিতি ও যুদ্ধের কারণে এর জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। সে কারণে দেশের জনগণের উৎপাদন বাড়ানো এবং নিজস্ব পণ্য ভোগ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। সরকারপ্রধান সকলের প্রতি, এক ইঞ্চি জমি অব্যবহৃত না রাখার বরং নিজ নিজ অবস্থান থেকে যা পারেন উৎপাদন করতে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভোলা-২ আসন থেকে নির্বাচিত আলী আজমের আরেকটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সবাই যদি সচেতন হয় এবং গুজবে কান না দেয়, তাহলে গুজব ছড়িয়ে কেউ কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সাধারণ মানুষের খাদ্যপণ্য নিয়ে খেলতে না পারে সেজন্য তারা সজাগ রয়েছেন। তিনি বলেন যে অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমদানি করতে হয় কিন্তু ‘আমরা আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই, উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই।’ ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা দোকানে প্রদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মূল্য তালিকা প্রদর্শিত হলে, ভোক্তা এটি দেখে প্রতারিত হচ্ছেন কি না তা বুঝতে পারবেন। সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে, তিনি সকলকে কোনও গুজবে কান না দেবার আহ্বান জানান।
পবিত্র রমজান মাসে তারাবি নামাজ ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত নাটোর-১ আসন থেকে নির্বাচিত আবুল কালামের অপর একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাবিহ নামাজ ও সেহরির সময় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না। সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম বেড়েছে। এরপরও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সবাইকে মনে করিয়ে দেন যে এক সময় দেশে ১০-১২ ঘণ্টা বা দিনের পর দিন লোডশেডিং থাকায় মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। ‘এখন, এটা আর ঘটবে না।’
সূত্র: বাসস